ব্লু কাট চশমা চেনার উপায় এবং উপকারিতা বিস্তারিত দেখুন
ব্লু কাট চশমা চেনার উপায়: বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল বা ট্যাব বেশি ব্যবহার করা মানুষের জন্য ব্লু কাট চশমা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় আইটেম।
এটি চোখের চাপ কমায়, স্ক্রিনের ক্ষতিকর ব্লু লাইট থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয় এবং দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন ব্যবহারেও আরাম দেয়। কিন্তু বাজারে এখন অনেক নকল বা নিম্নমানের ব্লু কাট চশমা পাওয়া যায়।
তাই কেনার আগে আসল ব্লু কাট চশমা চেনার উপায় জানা খুব জরুরি।এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ভাষায়, ধাপে ধাপে, ব্লু কাট চশমা চেনার সঠিক উপায়গুলো জানবো।
.
ব্লু কাট চশমা কী?
ব্লু কাট চশমা এমন একটি বিশেষ লেন্স যুক্ত চশমা, যা স্ক্রিন থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর ব্লু লাইট (Blue Light) ফিল্টার করে চোখকে সুরক্ষা দেয়।এটি চোখের ক্লান্তি কমায় এবং নিদ্রার মান ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্লু কাট চশমা চেনার উপায়
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর ব্লু লাইট রশি থেকে চোখকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই ভালো মানের ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করতে হবে। এজন্যই আপনাদের ব্লু কাট চশমা কেনার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে অরজিনাল চশমাটি কিনতে হবে।
তাই আপনাদের এখন ব্লু কাট চশমা চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে যা আমরা আজকের এই অংশে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করব। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন দোকানদার ব্লু কাট আসল চশমা চেনার জন্য ব্লু লেজার লাইট দিয়ে থাকে।
অবশ্যই পড়ুনঃ দাঁত ফাকা দূর করার ঘরোয়া উপায়
তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে যদি আপনি ব্লু কাট চশমা কিনে থাকেন, তাহলে সেই চশমার বক্সে তারা আপনাদের চশমা টেস্ট করার জন্য একটি নীল রঙের লেজার লাইট দিয়ে দিবে।
যার মাধ্যমে আপনি পরীক্ষা করতে পারবেন যে আপনার চশমাটি অরজিনাল নাকি নকল।ব্লু কাট অরিজিনাল চশমা চেনার জন্য আপনাকে প্রথমেই লেজার লাইটটি চশমার লেন্সের ওপর ধরতে হবে অর্থাৎ নীল লেজার লাইটটি অন করে চশমার লেন্সের উপর ধরবেন।
এখন ভালোভাবে চশমার দিকে লক্ষ্য রাখুন। নীল লেজার লাইটের ক্ষতিকর আলোক রশ্নি যদি চশমার লেন্স ভেদ করতে পারে তাহলে বুঝবেন এটি নকল ব্লু কাট চশমা।
আর যদি চশমার লেন্স বা কাচের মধ্য দিয়ে নীল লেজার লাইটের আলোক রশ্নি ভেদ না করতে পারে তাহলে বুঝবেন আপনার চশমাটি অরজিনাল ব্লু কাট চশমা। মূলত এখানে যদি ব্লু লাইটের আলোক রশ্নি চশমার লেন্সটি যদি বাধা প্রদান করতে পারে তাহলে এটি আসল চশমা।
আশা করছি আপনারা এখন ব্লু কাট চশমা অরিজিনাল চিনতে পারবেন। বর্তমানে প্রায়ই ব্লু কাট চশমা চেনার জন্য এ ধরনের ব্লু লেজার লাইট দেওয়া হয়ে থাকে।
বিশেষ করে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে কিনলে বক্সেই ব্লু লেজার লাইট দেওয়া থাকে যাতে আপনি চশমা পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন।
এভাবে আপনি সঠিক অরিজিনাল চশমা কিনে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর নীল রশ্নি থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারবেন।
মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার থেকে নির্গত ব্লু লাইট আমাদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে চোখ অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
তাছাড়াও চোখের ছানি পড়া রোগ হতে পারে। তাই আপনাদের ব্লু কাট চশমা চেনার উপায় সম্পর্কে জেনে সঠিক ব্লু কাট চশমা কিনে চোখকে রক্ষা করতে হবে।
ব্লু কাট চশমা চেনার ৭টি সহজ উপায়
১. লেন্সের রঙে হালকা হলুদ বা নীল টিন্ট থাকে
আসল ব্লু কাট লেন্সে সাধারণত খুব হালকা হলুদ বা নীলাভ ছায়া দেখা যায়।এটি একদম গভীর রঙ নয়, কিন্তু কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়।একদম পুরো স্বচ্ছ লেন্স হলে সন্দেহ থাকতে পারে।
২. স্ক্রিনে লেন্স ধরলে নীল রিফ্লেকশন দেখা যায়
ব্লু কাট চশমা স্ক্রিনের আলোতে ধরলে লেন্সে নীল, বেগুনি বা সবুজ রঙের রিফ্লেকশন দেখা যায়।এটি হলো ব্লু লাইট ফিল্টার হওয়ার প্রমাণ।
৩. ব্লু লাইট টর্চ টেস্ট (সাধারণ দোকানে এটি থাকে)
অনেক অপটিক্স শপে ব্লু লাইট টর্চ থাকে।টেস্ট করার নিয়ম:
- টর্চটি লেন্সে ফেলুন
- আসল ব্লু কাট চশমা নীল আলোকে লেন্স ভেদ করতে দেবে না
- নকল লেন্সে আলো সহজেই পার হয়ে যায়
৪. লেন্স কার্ড টেস্ট (Blue Light Card Test)
এটি সাধারণত চশমার বক্সে থাকে।টেস্ট করার নিয়ম:
- কার্ডে নীল আলো ফেলুন (লেন্স ছাড়া) → দাগ পড়বে
- এবার লেন্সের মাধ্যমে ফেলুন → দাগ পড়া বন্ধ হবে
- এটাই প্রমাণ লেন্স ব্লু লাইট ফিল্টার করছে।
৫. লেন্সের উপরে অ্যান্টি-রিফ্লেকশন কোটিং থাকে
আসল ব্লু কাট চশমায় AR Coating (Anti-Reflective coating) থাকে যা–
- চোখে আলো ঢোকা কমায়
- স্ক্রিনে কম গ্লেয়ার তৈরি করে
লেন্স কাত করে দেখলে চকচকে স্তর বোঝা যায়।
৬. ব্র্যান্ড ও স্পেসিফিকেশন যাচাই করুন
ভালো কোম্পানি সবসময় বক্সে বা ফ্রেমে উল্লেখ করে।
- Blue Light Protection
- UV400
- Anti-glare
- AR Coating
কোনো তথ্য না থাকলে নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৭. খুব কম দামে ব্লু কাট দাবি করলে সাবধান
ব্লু কাট লেন্স সাধারণ লেন্সের তুলনায় কিছুটা দামি।যদি কেউ অস্বাভাবিক কম দামে ব্লু কাট চশমা দেয়, তাহলে তা নকল বা নিম্নমানের হতে পারে।
ব্লু কাট চশমা কেন ব্যবহার করবেন?
- চোখের ক্লান্তি কমায়
- স্ক্রিন ব্যবহারে আরামদায়ক
- মাথাব্যথা কমায়
- ঘুমের মান ভালো করে
- চোখকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দেয়
ব্লু কাট চশমার উপকারিতা
আপনারা হয়তো জানেন মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে একপ্রকার ক্ষতিকর নীল আলোক রশ্মি নির্গত হয়।
এসব আলোক রশ্নি যদি আমাদের চোখে সরাসরি প্রবেশ করে তাহলে চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে চোখে না দেখা অথবা চোখে দূরের জিনিস কম দেখা এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
এ ধরনের ক্ষতিকর আলোকরশ্মি বাধা প্রদান করার জন্য আমাদের অবশ্যই ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করতে হবে।ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করার মাধ্যমেই আপনারা মোবাইল ফোনের নীল আলোক রশ্নি থেকে চোখকে নিরাপদে রাখতে পারবেন।
কারণ ব্লু কাট চশমার লেন্স এ ধরনের আলোক রশ্নি ভেদ করতে বাধা প্রদান করে। চশমার লেন্সের মধ্য দিয়ে নীল আলোক রশ্নি প্রবেশ করতে পারে না অর্থাৎ ভেদ করতে পারেনা। যার ফলে আমাদের চোখ অনেকটা নিরাপদে থাকে।
বর্তমানে প্রায় সকলেই ছোট থেকে বড় সকল ধরনের বয়সের মানুষেরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে তাদের চোখে নানা ধরনের সমস্যা হতে শুরু করে।
কম্পিউটার স্কিনে একটা না তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, চোখের পানি শুকিয়ে যায়, চোখ চুলকাতে থাকে ইত্যাদি সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে এভাবে কোন ধরনের প্রটেকশন ছাড়া মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে চোখে সানি পরা সমস্যা সহ চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনারা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করতে পারেন।
এ ধরনের চশমা ব্যবহার করলে যে কোন ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস থেকে ক্ষতিকর আলো প্রশ্নে চশমা ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে আপনার চোখ সুরক্ষিত থাকবে।
তাহলে বুঝতে পারলেন ব্লু কাট চশমার উপকারিতা হলো মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের স্কিনের ক্ষতিকর ব্লু রশ্নি থেকে চোখকে রক্ষা করা।
ব্লু কাট চশমার অপকারিতা
ব্লু কাট চশমার তেমন অপকারিতা নেই, বরং উপকারিতাই বেশি রয়েছে। কারণ এই চশমা ব্যবহার করার ফলে আমাদের চোখ নিরাপদে রাখতে পারি।
বর্তমানে স্মার্টফোন থেকে এক ধরনের ব্লু রশ্নি নির্গত হয় যা চোখের ক্ষতি করতে পারে। এজন্য ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করার ফলে এ ধরনের রশ্নির ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে অনেকেই আছে যারা ব্লু কাট চশমার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান।
তাদেরকে আমরা বলব এই এ চশমা ব্যবহার করে তেমন কোন ধরনের অপকারিতা পাওয়া যায় না। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ব্লু কাট চশমা পরিধান করে কম্পিউটার বা মোবাইল স্কিন ব্যবহার করা হলে চোখের নিচে কালো হয়ে যেতে পারে।
তবে এটি সবার ক্ষেত্রে হয় না, কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ও অতিরিক্ত সময় ধরে এই চশমা পড়ে থাকলে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আর কোন ধরনের অপকারিতা পাওয়া যায় না বা সমস্যা দেখা যায় না।
ব্লু কাট চশমার দাম
বর্তমানে বাজারে ব্লু কাট চশমা বিভিন্ন দামের পাওয়া যায়। কারণ চশমার ফ্রেম অনুযায়ী এর দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। চশমার ফ্রেম যত উন্নত হবে তত এর দাম বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়াও চশমার লেন্স ও চশমার ফ্রেম এর কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্লু কাট চশমা গুলো সাধারণত সাধারণত চশমা থেকে বেশি দামের হয়ে থাকে।
আপনারা ব্লু কাট চশমা ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন কোয়ালিটির পেয়ে যাবেন। সুতরাং বলা যায় ব্লু কাট চশমার দাম সাধারণত ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপনারা চাইলে চশমার ফ্রেমের কোয়ালিটি অনুযায়ী ৫০০ টাকাতেও ব্লু কাট কিনতে পারবেন।
উপসংহার - ব্লু কাট চশমা চেনার উপায়
আসল ব্লু কাট চশমা কেনার আগে কয়েকটি সহজ টেস্ট করলেই আপনি নকল পণ্য থেকে বাঁচতে পারবেন।কেনার সময় সবসময় ভালো ব্র্যান্ড, বিশ্বস্ত দোকান এবং উপরের টেস্টগুলো অনুসরণ করুন। তাহলে সহজে আপনি আসল ব্লু কাট চশমা কিনতে পারবেন।
